ভাইরাল ভিডিও সংক্রান্ত সত্যতা জনসাধারণের মাঝে তুলে ধরতে উদ্যোগী হলো দক্ষিন দিনাজপুর জেলা তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব।
1 min readআজকেরবার্তা বালুরঘাট, ২৬ জুন: ভাইরাল ভিডিও সংক্রান্ত সত্যতা জনসাধারণের মাঝে তুলে ধরতে উদ্যোগী হলো দক্ষিন দিনাজপুর জেলা তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব। সোমবার সদ্য প্রকাশিত তৃণমূল জেলা সভাপতির ভাইরাল ভিডিও সম্বন্ধে একটি সাংবাদিক বৈঠক করলেন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি মৃণাল সরকার।
জেলা সভাপতির ভাইরাল হওয়া ভিডিওর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে চলেছে দক্ষিন দিনাজপুর জেলা তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূল কংগ্রেসের অঞ্চল সভাপতি পদের বদলে ১০ লাখ টাকা চাওয়ার অভিযোগের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি মৃণাল সরকার। বিরোধীরা তাকে বদনাম করতে তার নামে বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ তুলছে বলে অভিযোগ জানান মৃণাল সরকার।
উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি মৃণাল সরকারকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা করছে বিরোধীরা বলে দাবি করেন তিনি। বিরোধীদের চক্রান্তের বিরুদ্ধে ও সত্য প্রকাশের লক্ষ্যে সোমবার বালুরঘাট পৌরসভার সুবর্ণ তট হলে এক সাংবাদিক সম্মেলন করে এ কথা জানালেন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা তৃণমূল সভাপতি মৃণাল সরকার।
এদিনের এই সাংবাদিক বৈঠকে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি মৃণাল সরকার জানান, গতকাল থেকে বিরোধীদল বিজেপি তার বিরুদ্ধে মিথ্যা ভিডিও প্রকাশ করে চলেছে জনসঞ্চার মাধ্যমে। তাকে কালিমা লিপ্ত করার জন্য বহু মিথ্যে ভিডিও তুলে আনছে বিরোধীরা বলে দাবি করেন তিনি।
একটি ভিডিওর মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের অঞ্চল সভাপতি পদের জন্য ১০ লক্ষ টাকা চাওয়ার অভিযোগ ওঠে মৃণাল সরকারের বিরুদ্ধে। সেই ভিডিওতে কোনভাবেই মৃণাল সরকারের মুখ থেকে টাকা চাওয়ার বিষয় নিয়ে কোন মন্তব্য নেই বলে দাবি করেন তিনি। তিনি দাবি করেন বিজেপি নোংরা রাজনীতি করছে। আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টাতে এই অভিযোগ তোলে বিজেপি বলে দাবি করেন তিনি।
পাশাপাশি অপর একটি ভিডিওতে তার বিরুদ্ধে মদ্যপানের অভিযোগ তাদের বিজেপি। সেই বিষয়ে মিনাল সরকার জানান, এই ভিডিওটি গত বছর দূর্গা পূজার সপ্তমীর দিনের ভিডিও। বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে খাওয়া দাওয়া করার ভিডিও। কিন্তু সেই ভিডিওতে কোনভাবেই স্পষ্ট নেই যে তিনি মদ্যপান করছেন। পাশে মদ্যপান চলছিল কিন্তু তিনি সেই মদ্যপানে অংশগ্রহণ করেননি বলেই দাবি করেন তিনি। অতি ব্যক্তিগত ভিডিওকে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যবহার করায় বিজেপির বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন তিনি। তাকে কালিমা লিপ্ত করার চেষ্টা করতে ব্যক্তিগত ভিডিও ভাইরাল করেছে বিজেপি বলে দাবি করেন তিনি। তৃণমূল কংগ্রেসকে বদনাম করার চেষ্টায় এই ভিডিও ভাইরাল হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি মৃণাল সরকার আরো বলেন, যে সমস্ত ভিডিও ভাইরাল করা হয়েছে সেই সমস্ত ভিডিও বহুদিনের পুরনো। কিছু মিথ্যে ভিডিও মিথ্যে তথ্য দিয়ে মানুষের কাছে নিয়ে আসে নির্বাচনের আগে সহানুভূতি উড়াতে চাচ্ছি বিজেপি বলে দাবি করেন তিনি। তৃণমূল কংগ্রেসকে মানুষের চোখে খারাপ করতে এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বিজেপি বলে দাবি তার। বিজেপি অতি নিম্নমানের রাজনীতি করছে অভিযোগ করেন তিনি।
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা বিজেপির পক্ষ থেকে বিজেপি রাজ্য সভাপতি টুইটার হ্যান্ডেলে তৃণমূল কংগ্রেসকে বদনাম করতে এই সমস্ত ভিডিও পোস্ট করা ও নির্বাচনের আগে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা বিজেপির বিভিন্ন নোংরা রাজনীতির তীব্র প্রতিবাদ করে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা তৃণমূল কংগ্রেস বলে জানান তিনি।
মৃণাল সরকার আরো বলেন, বিজেপির পক্ষ থেকে তাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হচ্ছে। বিজেপির এই নোংরা রাজনীতি তিনি তীব্র প্রতিবাদ করেন। নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে বিজেপি তারা তৃণমূল কংগ্রেসকে কালিমা লিপ্ত করার চেষ্টায় বিজেপি জয়লাভ করবে না বলে দাবি করেন তিনি। বাংলার মানুষ তৃণমূলের সাথে আছে এবং রয়েছে বলেই জানান তিনি।
মৃণাল সরকার দাবি করেন, বিজেপি পুরনো ভিডিও নির্বাচনের আগে ভাইরাল করছে ভোট বাক্সে প্রভাব ফেলতে। তিনি জানান টাকা লেনদেনের যে ভিডিও তুলে ধরেছে বিজেপি সেই ভিডিও জেলা সভাপতি হওয়ার আগে যখন মৃণাল সরকার ব্লক সভাপতি ছিলেন তখনকার। টাকা প্রসঙ্গে যে কথা হয়েছে সেখানে যে ভিডিও করছিল বারবার সে টাকার প্রসঙ্গ তুললেও আমি ওই প্রসঙ্গে কোন কথাই বলিনি। তার কথার গুরুত্ব দিইনি। ভিডিওতে কোথাও টাকা নেওয়ার কথা বলা নেই বলেই দাবি করেন তিনি।
এই না অনুমতিতে ব্যক্তিগত ভিডিওকে রাজনৈতিক কারণে টেনে এনে ভিডিও ভাইরাল করার অভিযোগে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে চলেছে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি মৃণাল সরকার বলে জানান তিনি। ভিডিও ভাইরাল করার বিষয়ে আইনের দ্বারস্থ হতে চলেছেন তিনি বলে জানান। তিনি দাবি করেন অতি সীমিত লোকজন উপস্থিত ছিলেন তখন তাদের মধ্যে থেকেই কেউ এই ঘটনা ঘটিয়েছে।
গতকাল ঠিক কারণ বিবরণ করে ১৯ জনকে বহিষ্কার করে তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব। এই বহিষ্কারের ফলেই কি এই ভাইরাল ভিডিওর ঘটনা? এই প্রশ্নের উত্তরে মৃণাল সরকার বলেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে কাউকে বহিষ্কার করেনি দল বহিস্কার করেছে।
মূলত তিনি জানান আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপি কোনভাবেই প্রচার প্রসারে মানুষের মধ্যে পৌঁছাতে পারছে না। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার মানুষ বিজেপিকে ঢুকতে দিচ্ছে না মানুষের মাঝে বলে দাবি করেন তিনি। বিজেপি রাজ্য সভাপতি রাজ্য ফেলে নিজের জেলায় পড়ে রয়েছেন। কিন্তু তারপরেও বিজেপির প্রচার প্রসার হচ্ছে না বলেই দাবি করেন তিনি। জেলার মানুষের তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতি ভালবাসা রয়েছে সেই ঈর্ষা থেকেই বিজেপি এই সমস্ত কাজ করছে বলে দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে প্রাক্তন বালুরঘাট সংসদ অর্পিতা ঘোষ জানান, বিজেপির কোন কাজ নেই। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে মৃণাল সরকার সমস্ত তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীদের কি কালিমা লিপ্ত করা বিজেপির কাজ। বিজেপি রাজ্য সভাপতি ডঃ সুকান্ত মজুমদার কে এক হাত নেন তিনি। ব্যক্তিগত ভিডিওকে রাজনৈতিক স্বার্থে টুইট করা কে কেন্দ্র করে অর্পিতা ঘোষ স্তম্বিত হলে জানান তিনি। নির্বাচনের আগে তৃণমূল কংগ্রেসকে কালিমা লিপ্ত করার লক্ষে বিজেপির কাজ করে চলেছেন বলে দাবি করেন তিনি। অর্পিতা ঘোষ বলেন সুকান্ত মজুমদার একজন অধ্যাপক। শিক্ষিত মানুষ হয়েও যদি তিনি ব্যক্তিগত বিষয়কে জনসংখ্যার মাধ্যমে তুলে ধরেন তাহলে সেটা খুবই নিন্দনীয় বিষয়। অনুমতি ছাড়া কোন মানুষের ব্যক্তিগত বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা বিজেপির কাজ। তৃণমূল কংগ্রেসের সততা ও নম্রতাকে কাজে লাগিয়ে বিজেপি নোংরা রাজনীতি করছে বলে দাবি করেন তিনি।
এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় নির্বাচন দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত তথা বালুরঘাট লোকসভার প্রাক্তন সংসদ অর্পিতা ঘোষ। অর্পিতা ঘোষ বলেন, ভিডিওর কোথাও জেলা সভাপতির টাকা নেওয়ার কথা বলা নেই বলে আমরা দেখেছি। সুকান্ত মজুমদারের মতো একজন শিক্ষিত মানুষ এই ঘটনায় টুইট করে নোংরা রাজনীতির পরিচয় দিয়েছেন। তৃণমূল জেলা সভাপতি কে ক্লিনচিট দিয়ে তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে আইনি প্রক্রিয়া নেয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে বিজেপির জেলা সভাপতি স্বরূপ চৌধুরী জানিয়েছেন, ভিডিওটির যে সত্যতা রয়েছে তা কিন্তু প্রকারান্তের তৃণমূল নেতারা স্বীকার করে নিয়েছেন। তাদের নিজের লোকেরাই নিশ্চয়ই ভিডিওটি তুলেছিল, তা ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। তাছাড়া টাকা নেওয়াই তৃণমূলের কালচার। তৃণমূলের আইনি ব্যবস্থা নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি জানান, সেটা তাদের দলের ব্যাপার, নিতেই পারেন। প্রয়োজনে আমরাও নেব।