: সাড়ে সতেরো কোটি টাকার অভাবে নিভে যেতে পারে সপ্তর্ষি মন্ডল। বিরলতম রোগে আক্রান্ত নয় মাসের শিশু সপ্তর্ষি।
1 min readআজকেরবার্তা, বালুরঘাট, ২৫ আগস্ট :- “স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি” বিরলতম রোগে আক্রান্ত বালুরঘাটের নয় মাসের শিশু সপ্তর্ষি মন্ডল। এই রোগের চিকিৎসা খুবই ব্যয়বহুল। চিকিৎসার খরচ নিয়ে কার্যত দুশ্চিন্তায় ঘুম উড়েছে সপ্তর্ষির পরিবারের। দুই বছর বয়সের মধ্যে চিকিৎসা না হলে মৃত্যু হতে পারে শিশুর। একমাত্র ছেলের জীবন বাঁচাতে অর্থ সাহায্যের আর্জি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার দ্বারস্থ হয়েছেন বাবা ধ্রুব মন্ডল ও মা সঙ্গীতা মন্ডল।
বালুরঘাট শহরের মঙ্গলপুর এলাকার বাসিন্দা ধ্রুব মন্ডল। তিনি একজন ভারতীয় সেনাকর্মী। স্ত্রী সঙ্গীতা মন্ডল গৃহবধূ। তাদেরএকমাত্র ছেলে সপ্তর্ষি মন্ডল। জন্মের নয় মাস পরেও শিশুটির মধ্যে কোন শিশুসুলভ অঙ্গভঙ্গী বা শারিরীক বিচলিত ভাব দেখতে পায় না পরিবার। দুশ্চিন্তায় বালুরঘাটের এক শিশু বিশেষজ্ঞর কাছে গত এপ্রিল মাসে যান ওই শিশুর পরিবারের লোকেরা। যেখানে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে শিশুর জিনগত সমীক্ষা করা হয়। এরপরেই জানাযায় শিশুটি স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি রোগে আক্রান্ত। বিরলতম এই রোগের কথা শুনেই চমকে ওঠে পরিবার।
সঠিক চিকিৎসা করত প্রথমে কলকাতা এবং তারপর দিল্লির এইমসে নিয়ে যাওয়া হয় ছোট্ট সপ্তর্ষিকে। কিন্তু সেখানেও পরীক্ষা নিরীক্ষার পর একই রোগ স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি টাইপ-ওয়ান এর কথা জানান চিকিৎসকরা। স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি টাইপ-ওয়ান খুবই বিপজ্জনক রোগ। চিকিৎসা ছাড়া, অনেক আক্রান্ত শিশু দুই বছর বয়সের আগেই মারা যায়। শিশুরা সাপোর্ট ছাড়া বসতে পারে, কিন্তু তাদের পক্ষে দাঁড়ানো বা সাপোর্ট ছাড়া হাঁটা কঠিন হয়ে পড়ে।
চিকিৎসকরা জানান, স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি (SMA) একটি জেনেটিক রোগ যা বিশেষভাবে মস্তিষ্ক এবং মেরুদন্ডের মোটর নিউরন স্নায়ু কোষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। বাহু, পা, বুক, গলা, মুখ এবং জিভের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করে মোটর নিউরন। সেই সঙ্গে পেশীর নড়াচড়া যেমন হাঁটা, কথা বলা, গিলতে এবং শ্বাস নেওয়াতেও নিয়ন্ত্রণ করে।
এই রোগটি এতটাই বিপজ্জনক যে সময় মতো চিকিৎসা না হলে আক্রান্তের জীবনও চলে যেতে পারে। SMA এর সবচেয়ে সাধারণ রূপটি একটি পরিবর্তিত বা অনুপস্থিত জিনের কারণে ঘটে। এটি সারভাইভাল মোটর নিউরন জিন ওয়ান (SMN1) নামে পরিচিত। এটি সাধারণত মোটর নিউরনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন উৎপাদনের জন্য কাজ করে।
দু বছরের মধ্যে এর সঠিক চিকিৎসা না হলে সপ্তর্ষিকে আর বাঁচানো সম্ভব না এমনটাও জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। কিন্তু স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি নামের এই মারণ রোগের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এই রোগের জন্য ব্যবহৃত একটিমাত্র ইনজেকশন রয়েছে “জোলজেনসমা” যার দাম প্রায় সাড়ে সতেরো কোটি টাকা, যা ভারতে অমিল। শুধুমাত্র বিদেশ থেকে এই ইনজেকশনটি এনেই বাঁচানো সম্ভব ছোট্ট ওই শিশুটিকে।
একজন সাধারণ সেনাকর্মীর পক্ষে এত খরচ বহন করা অসম্ভব ব্যাপার। যারফলে কার্যত মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে অসহায় ওই শিশুর পরিবারের। কিন্ত কোনভাবেই যেন হাল ছাড়তে নারাজ সেনাকর্মী ওই শিশুর বাবা ধ্রুব মন্ডল। ছেলের এই বিরলতম রোগের চিকিৎসার জন্য সকলের কাছে কড়জোড়ে আবেদন জানিয়ে ইতিমধ্যে দ্বারস্থ হয়েছেন বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমেরও।
শিশুর মা সঙ্গীতা মন্ডলের দাবি, একমাত্র দেশের প্রধানমন্ত্রীই পারে তার ছেলের জীবন বাঁচাতে। কিন্তু কিভাবে জুটবে এই বিপুল অঙ্কের টাকা? তা ভেবেই যেন ডুকরে কাঁদছেন শিশুর দিদা। একই চিন্তা বাড়িয়েছে প্রতিবেশী ও অনান্য আত্মীয়দের মধ্যেও। মাত্র ১৫ মাসের মধ্যে সাড়ে সতেরো কোটি টাকা জোগাড় করে কি আদৌও ছোট্ট সপ্তর্ষির জীবন ফেরাতে পারবে তার পরিবার? যে প্রশ্নই যেন এখন চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে গোটা বালুরঘাট শহরে।
শিশুর মা সঙ্গীতা মন্ডল বলেন, বালুরঘাট থেকে দিল্লি সব জায়গায় একই রিপোর্ট সামনে এসেছে। রোগের সমস্ত উপসর্গও তার শিশুর মধ্যে রয়েছে। কিন্তু কিভাবে ছেলের জীবন ফেরাবেন তা তারা ভাবতেই পারছেন না। এত টাকাও কিভাবে জোগাড় হবে সেটাও বুঝতে পারছেন না। তবে দেশের প্রধানমন্ত্রী চাইলেই একমাত্র তার শিশুকে বাঁচানো সম্ভবপর হবে।
শিশুটির দাদুর দাবি যদি সহৃদয় ব্যক্তিরা এই বিশাল টাকা দিয়ে তাদের সাহায্য করেন। তবে নাতির চিকিৎসা করাতে পারবেন।