দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার মোট ১৯ জনকে বহিষ্কার করার তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব। তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি দলীয় প্রার্থীদের বিরুদ্ধে মনোনয়ন জমা দেওয়া সহ বিভিন্ন দল বিরোধী আচরণ করায় এই সমস্ত তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীদের বহিষ্কার করা হয় বলে দাবি তৃণমূল কংগ্রেসের।
1 min readআজকেরবার্তা, দক্ষিন দিনাজপুর, ২৫ জুন: রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের নির্দেশে দক্ষিন দিনাজপুর জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে সাংবাদিক বৈঠক করা হয় রবিবার। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার মোট ১৯ জনকে বহিষ্কার করে তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব। তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি দলীয় প্রার্থীদের বিরুদ্ধে মনোনয়ন জমা দেওয়া সহ বিভিন্ন দল বিরোধী আচরণ করার অভিযোগে অভিযুক্তদের বহিষ্কার করে তৃণমূল কংগ্রেস।
পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘোষণা হয়ার পর চলতি মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত মনোনয়ন দেওয়ার সময় ছিল। যেখানে বহু মানুষ তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে মনোনয়ন জমা দেন। কিন্তু পরবর্তীতে দলীয় নির্দেশ অনুযায়ী কিছু মনোনয়ন জমা দেওয়া প্রার্থী দলীয় চিহ্ন পায়না। দলের পক্ষ থেকে অন্যান্য প্রার্থীদের দলীয় চিহ্ন দেওয়া হয় পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দিতার জন্য।
যে সমস্ত মনোনয়ন প্রদানকারী প্রার্থীরা দলীয় চিহ্ন পাইনি এই সমস্ত প্রার্থীদের জন্য চলতি মাসের ১৭ তারিখ তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে একটি বৈঠক করা হয়। এই বৈঠকের মাধ্যমে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী যারা ছিলেন তাদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করা নির্দেশ দেওয়া হয় তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে।
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি মৃণাল সরকারের দাবি, দলের সিদ্ধান্তর উপরে ভরসা রেখে মনোনয়ন প্রত্যাহারের নির্দেশ মোতাবি ৮০ শতাংশ গোঁজ প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করে। কিন্তু ২০ শতাংশ গোঁজ প্রার্থী তৃণমূল কংগ্রেসের দলীয় চিহ্ন না পাওয়ার পরেও তাদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করেনি। তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি এই সমস্ত প্রার্থীরা দল থেকে নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থকে বেশি ভালোবাসে। ইচ্ছাকৃতভাবে দলেও প্রার্থীদের হারিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে তারা গোঁজ প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন।
রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের নির্দেশে দল থেকে দুর্নীতি সরাতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে যোগদানকারী ও আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে গোঁজ প্রার্থী হিসাবে যারা রয়েছে তাদের দক্ষিন দিনাজপুর জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছে দল বলে জানান মৃণাল সরকার। এদিন মোট ১৯ জন কে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
দক্ষিন দিনাজপুর জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন সম্পাদক সরফরাজ আলি, ২১নং জেলা পরিষদের আসনে কংগ্রেসের হয়ে প্রার্থী হয়ায় তাকে তৃণমূল কংগ্রেস থেকে বহিষ্কার করা হয়। অন্য রাজনৈতিক দলে যোগ দেওয়া ও মনোনয়ন জমা দেওয়ার জন্য গাঙ্গুরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ভোপাল ঠাকুর কে বহিষ্কার করে তৃণমূল কংগ্রেস। অন্য রাজনৈতিক দল থেকে মনোনয়ন জমা দেওয়ায় বংশিহারী পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ শুকলাল রাম কে বহিষ্কার করে তৃণমূল কংগ্রেস। নির্দল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিভ্রান্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি করার অভিযোগে উদয় অঞ্চল কমিটির সম্পাদক মন্তেজার আলী ও মহেদুর মিঞা কে বহিষ্কার করে তৃণমূল কংগ্রেস। দল বিরোধী আচরণ করার অভিযোগে গঙ্গারামপুর ব্লকের উদয় অঞ্চলের তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী হাফিজা বিবি ও সফিউদ্দিন সরকার কে বহিষ্কার করে তৃণমূল কংগ্রেস।
পাশাপাশি তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে স্ত্রীকে প্রার্থী করার পরও হরিরামপুর ব্লকের ভাইস প্রেসিডেন্ট নারায়ন সরকার নির্দল হয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। পাশাপাশি অন্যান্য গোঁজ প্রার্থীদের সহযোগিতা করে তিনি দল বিরোধী কাজ করার অভিযোগে তাকে বহিষ্কার করে তৃণমূল কংগ্রেস। গোঁজ প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন জমা করায় হিলি ব্লকের রঞ্জিত দাস, শ্যামলী হাসদা। তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে গোঁজ প্রার্থী দেওয়ায় ও দল বিরোধী আচরণ করার অভিযোগে কুমারগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ সমাপ্ত চৌধুরী। গোঁজ প্রার্থী দেওয়ায় দিওর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান অঞ্জলি তিজ্ঞা ও উপ প্রধান জান্নাতুন বিবি কে বহিষ্কার করে তৃণমূল কংগ্রেস। সাময়িক ভবে বহিষ্কার করা হয় সমজিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান রুনা লায়লা বিবি। ভৈওর অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট রহিম মিঞা কে বহিষ্কার করে তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব।
পাশাপাশি বিগত দিনে কুশমন্ডি ব্লকের ৩ নং উদয়পুর অঞ্চলের তৃণমূল কংগ্রেসের পঞ্চায়েত নির্বাচনে টাকার বিনিময়ে প্রার্থী পদ দেওয়ার অভিযোগ তুলে কুশমন্ডি বিধায়িকা রেখা রায়ের স্বামী নকুল রায় কে আক্রমণ করে তৃণমূল কংগ্রেসের মহিলারা। নারগিস বেগমের নেতৃত্বে এই ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ তৃণমূল কংগ্রেসের। প্রার্থী পদ প্রদান করা নিয়ে কুশমন্ডি বিধায়িকা রেখা রায়ের স্বামী নকুল রায় যুক্ত নয়। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কুশমন্ডি বিধায়িকা রেখা রায়ের স্বামী নকুল রায় কে হেনস্তা করার অভিযোগে ও গোঁজ প্রার্থী দেওয়ার নারগিস বেগম কে বহিষ্কার করে তৃণমূল কংগ্রেস। পাশাপাশি নার্গিস বেগমের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগে পুলিশ প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস বলে জানান জেলা সভাপতি মৃণাল সরকার। গোঁজ প্রার্থী দেওয়ার অভিযোগে তৃণমূল কংগ্রেসের তপন পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সদস্য সুমতি হারো কে বহিষ্কার করে তৃণমূল কংগ্রেস।
উদয় অঞ্চলে সাতটি গোঁজ প্রার্থী পড়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। তৃণমূল কংগ্রেসের অভিযোগ একাধিকবার দলের পক্ষ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানোর পরও মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে দেয়নি অভিযুক্ত। দল বিরোধী আচরণের পাশাপাশি একাধিক নির্দল প্রার্থীদের হয়ে প্রচার করার অভিযোগে গঙ্গারামপুর ব্লকের উদয় গ্রাম পঞ্চায়েতের চেয়ারম্যান ফইজুল মিঞা কে বহিষ্কার করে তৃণমূল কংগ্রেস। বিগত বিধানসভা নির্বাচনেও কুমারগঞ্জের প্রার্থী তোরাফ হোসেন মন্ডল এর বিরুদ্ধে একাধিক দল বিরোধী আচরণ করেছিলেন করেন ফয়জুল মিঞা বলে অভিযোগ তৃণমূল কংগ্রেসের। আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃনমুল কংগ্রেস কোনভাবেই অন্যায়কে প্রশ্রয় দেবে না জন্যই গঙ্গারামপুর ব্লকের উদয় গ্রাম পঞ্চায়েতের চেয়ারম্যান ফইজুল মিঞা কে বহিষ্কার করে তৃণমূল কংগ্রেস বলে জানান মৃণাল সরকার।
গঙ্গারামপুর ব্লকের 30 নম্বর পঞ্চায়েত সমেতিতে কংগ্রেসের হয়ে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অভিযোগে প্রাক্তন পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য ও গঙ্গারামপুর ব্লক কমিটির প্রাক্তন সদস্য আব্দুল লতিফ মিঞা কে বহিষ্কার করে তৃণমূল কংগ্রেস।
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার মোট ১৯ জনকে বহিষ্কার করার তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব। তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি দলীয় প্রার্থীদের বিরুদ্ধে মনোনয়ন জমা দেওয়া সহ বিভিন্ন দল বিরোধী আচরণ করায় সমস্ত তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীদের বহিষ্কার করা হয়। দলের স্বচ্ছতা বজায় রাখতে এই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে রাজ্য তৃণমূলের নির্দেশে দক্ষিন দিনাজপুর জেলা তৃণমূল কংগ্রেস বলে জানান মৃণাল সরকার।
অপরদিকে তৃণমূল কংগ্রেস দ্বারা বহিষ্কৃত প্রাক্তন দক্ষিন দিনাজপুর জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সম্পাদক সরফরাজ আলী জানান, তিনি চলতি মাসের ১৪ তারিখে তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্বর কাছে পদত্যাগ পত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন। এরপর তৃণমূল কংগ্রেস কারে বহিষ্কার করবে না করবে সেটা তাদের ব্যপার।
এবিষয়ে দক্ষিন দিনাজপুর জেলা বিজেপি সভাপতি স্বরুপ চৌধুরী জানান, তৃণমূল কংগ্রেসের গোষ্ঠী কোন্দল প্রকাশ্যে আসছে। তৃণমূল কংগ্রেসের উর্দন নেতৃত্ব কাকে বহিষ্কার করেছে না করেছে তা নিয়ে বিজেপির কোন মন্তব্য নেই। তিনি জানান, তৃণমূল কংগ্রেস একটি অরাজনৈতিক দল। দলের কর্মীদের প্রতি উর্ধতন কতৃপক্ষর কোন স্বচেতনতা নেই। তৃণমূল কংগ্রেসের মনোনয়ন জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের গোষ্ঠী দন্ধ বলে কটাক্ষ করেন বিজেপি সভাপতি।