কন্যা সন্তান হওয়ায় মেয়ে ও স্ত্রীকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক সমাজকর্মীর বিরুদ্ধে।
1 min read
আজকের বার্তা, মালদা, ২৪ সেপ্টেম্বর ঃ- সমাজের বিভিন্ন জায়গায় নিজেকে সমাজকর্মী, সমাজসেবী, হিসেবে তুলে ধরে নিজের বাড়িতেই সমাজ সচেতকের পরিচয় দিতে পারলো না এক ব্যাক্তি। কন্যা সন্তান হওয়ায় নিজের দেড় মাসের মেয়ে ও স্ত্রীকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ওই সমাজকর্মীর বিরুদ্ধে। নির্যাতিতা স্ত্রী দেবলীনা দাস তার স্বামী শুভদীপ সরকারের বিরুদ্ধে ইংরেজবাজার থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। এরপরও পুলিশ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেওয়ায় মালদা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন নির্যাতিতার স্ত্রী। বর্তমানে দেবলিনা দেবী তার দেড় মাসের কন্যা সন্তানকে নিয়ে মালদা শহরের তার বাবার বাড়ী সর্বমঙ্গলাপল্লীতে রয়েছেন।
পুলিশের দায়ের হওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে জানা গিয়েছে, দেবলিনা দাসের বাড়ি মালদা শহরের সর্বমঙ্গলাপল্লী এলাকায়। তার বাবা দীর্ঘদিন আগে প্রয়াত হয়েছেন। পরিবারে রয়েছেন বৃদ্ধা মা। অন্যদিকে শুভদীপ সরকারের বাড়ি মকদমপুর এলাকায় । পেশায় তিনি নিজেকে সমাজকর্মী হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন। বছরখানেক আগে দেবলিনা দাসের সঙ্গে বিয়ে হয় শুভদীপ সরকারের। বিয়ের কয়েক মাস পর থেকেই স্ত্রী দেবলীনার ওপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালানো শুরু করে স্বামী শুভদীপ সরকার বলে অভিযোগ। এর পর কন্যা সন্তান হওয়াতে তাদের শশুর বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
এদিকে নির্যাতিতা গৃহবধূ দেবলিনা দাস বলেন, বিয়ের একমাস পর থেকেই আমার প্রতি নানাভাবে নির্যাতন শুরু করে। আসলে আমার বাবার সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল শুভদীপের। কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়ার পর থেকে শুভদীপ সরকার আমার উপর নির্যাতন ক্রমাগত চালাতে থাকে। এরপর অত্যাচার করে আমাকে এবং দেড় মাসের কোলের সন্তানকে স্বামী বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়।
দেবলীনাদেবী আরও বলেন, এখন পুলিশ ও আদালতে মামলা করেছি। সেই মামলা তুলে নেওয়ার জন্য শুভদীপ সরকার ফোনে ক্রমাগত প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। প্রাণভয়ে বাড়ি থেকে বেরোতে পারছি না। অনেক অসহায়তার মধ্যে আছি ।
ওই নির্যাতিতা গৃহবধুর মা শম্পা দাস বলেন, মেয়ে ও নাতনিকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার পর এখন শুধু ফোন করে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। জামাই শুভদীপ সরকার নাতনিকে অপহরণ করে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। যেহেতু কন্যা সন্তান হয়েছে তার জন্য আর এখন মেয়েকে আর নাতনিকে মেনে নিতে চাইছে না জামাই শুভদীপ। ইংরেজবাজার থানায় অভিযোগ জানানো হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ জামাইকে গ্রেপ্তার করছে না। সুবিচারের আশায় এখন আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি।
নির্যাতিতা গৃহবধূর আইনজীবী অমিতাভ মৈত্র বলেন, যেহেতু বধূ নির্যাতনের মামলা করা হয়েছে। তার জন্য দেবলীনা দাসকে নিয়মিত ফোন করে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এমনকি কন্যা সন্তান হওয়ার জন্য দেবলিনাদেবীকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে অভিযুক্ত স্বামী শুভদীপ সরকার। তিনি নিজেকে সমাজসেবী হিসাবে দাবি করলেও কি সেবা করছেন জানি না। তবে শুভদীপ সরকারের বিরুদ্ধে প্রতারণা, বধূ নির্যাতন, প্রাণনাশের হুমকি সহ বেশ কয়েকটি ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। ইংরেজবাজার থানার পুলিশকে বলা হয়েছে অভিযোগের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।
এদিকে যার বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই শুভদীপ সরকার অবশ্য পুরো বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন। তার বক্তব্য, এই ধরনের কোন ঘটনা ঘটে নি। যেসব অভিযোগে কথা বলা হচ্ছে সবটাই মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন।