জেলা আদালতে আত্মসমর্পণ করার পর জামিন পেল দন্ডীকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত প্রদীপ্ত চক্রবর্ত্তী। মামলার পরবর্তী শুনানি ১লা জুলাই।
1 min readআজকেরবার্তা বালুরঘাট, ২৪ জুন: জামিন পেল দণ্ডী কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত প্রদীপ্তা চক্রবর্ত্তী। শুক্রবার আত্মসমর্পণ করার পর শনিবার সকালে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা আদালতের বিচারক জামিন ধার্য করে দণ্ডী কান্ডের মূল অভিযুক্ত প্রদীপ্তা চক্রবর্ত্তীর। তবে মামলার শুনানি চলবে বলে খবর।
শুক্রবার দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা আদালতে আত্মসমর্পণ করে রাজ্য জুড়ে চর্চিত দণ্ডী কান্ডের মূল অভিযুক্ত প্রদীপ্তা চক্রবর্ত্তী। বালুরঘাট জেলা ও দায়রা আদালতের প্রথম কোর্টের বিচারক অলি বিশ্বাস প্রদীপ্তার জামিন মঞ্জুর করেন। শুক্রবার দক্ষিন দিনাজপুর জেলা আদালতে দণ্ডী কান্ডের নির্যাতিতাদের উপস্থিতিতে জামিন পায় মূল অভিযুক্ত প্রদিপ্তা চক্রবর্ত্তী।
শুক্রবার দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা আদালতে উপস্থিত হয়ে দণ্ডী কান্ডের মামলায় আদিবাসী তিন নির্যাতিতা মহিলার মূল অভিযুক্তর জামিনের বিষয়ে কোনও আপত্তি না জানানোর ফলে বিচারক জামিন মঞ্জুর করেন। দণ্ডী কান্ডের মামলায় প্রদীপ্তা চক্রবর্তী সহ মোট তিন জনের বিরুদ্ধে পুলিশ আদালতে চার্জশিট পেশ করেছে। এদিন জামিন মঞ্জুর হলেও এখনো মামলা চলবে বলে খবর। এই মামলার পরবর্তী শুনানি ১ জুলাই।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করে তপন এলাকার দুইশতাধীক মহিলা। যাদের মধ্যে থেকে তিনজন আদিবাসী সম্প্রদায়ের মহিলা কে বিজেপিতে যোগদান করার প্রায়শ্চিত্তের দরুন বালুরঘাট শহরের রাস্তায় প্রায় এক কিলোমিটার দণ্ডী কাটিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস জেলা পার্টি অফিসে নিয়ে গিয়ে তাদের পুনরায় তৃণমূল কংগ্রেসের যোগদান করেন তৎকালীন মহিলা তৃণমূল সভানেত্রী প্রদীপ্ত চক্রবর্তী। ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয় সমগ্র রাজ্যের রাজনৈতিক মহল।
দণ্ডী কান্ডের ঘটনার ড্যামেজ কন্ট্রোলে তৎক্ষণাৎ মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি পদ থেকে অপসারিত করা হয় দণ্ডী কান্ডের অভিযুক্ত প্রদীপ্তা চক্রবর্তীকে। তৃণমুল কংগ্রেসে পক্ষ থেকে ড্যামেজ কন্ট্রোলে আদিবাসী সম্প্রদায়ের স্নেহলতা হেমব্রমকে করা হয় মহিলা জেলা সভাপতি। দণ্ডী কান্ডের নির্যাতিত আদিবাসী মহিলাদের সাথে দেখা করে তাদের জবান বন্দী নিয়ে যায় মহিলা কনিশনের কর্মকর্তারা। কিন্তু তারপরেও দণ্ডী কাণ্ডের ঘটনায় বিরোধীদের একাধিক আন্দোলন চলতে থাকায় নব জোয়ার সফরে দক্ষিন দিনাজপুর জেলায় এসে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় পর্যন্ত দেখা করেন দন্ডিকাণ্ডে নির্যাতিত মহিলাদের সাথে।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও আদিবাসী সংগঠনগুলির একের পর এক বিভিন্ন আন্দোলন চালাতে থাকা আদিবাসী মহিলাদের বালুরঘাট শহরের রাস্তায় দণ্ডী কাটানোর ঘটনার প্রতিবাদে। মহিলা তৃণমূল কংগ্রেস সভানেত্রীর পথ থেকে বরখাস্ত করার পর। বালুরঘাট পৌরসভার উপ-পৌরাধীক্ষার পদ থেকেও অপসারণ করা হয় প্রদীপ্তা চক্রবর্তীকে। কিন্তু তারপরও প্রদীপ্ত চক্রবর্তীর গ্রেপ্তারের দাবিতে একাধিক আন্দোলন চলতে থাকে জেলা জুড়ে।
সেই ঘটনায় জেলা সহ রাজ্য জুড়ে বিতর্ক দেখা দেয় রাজনৈতিক মহলে। বিরোধীদের দাবি ছিল তৃণমূল নেত্রী প্রদীপ্তা চক্রবর্তীকে গ্রেফতার করতে হবে। পুলিশ ৫০৫ ও ৫০৯ ধারায় এবং এসসি এসটি প্রিভেনশন অব এট্রোসিটি অ্যাক্ট এ মামলা দায়ের করে। যদিও পুলিশ ঘটনায় আনন্দ রায় ও বিশ্বনাথ দাস নামে দুই যুবককে গ্রেফতার করে বালুরঘাট আদালতে তোলে। প্রদীপ্তা চক্রবর্তী গ্রেপ্তার দাবিতে সরব হয় বিরোধীরা।
এরপরেই জেলা পুলিশ প্রদীপ্তা চক্রবর্তী কে ওই মামলায় নোটিশ পাঠায়। ঘটনায় বালুরঘাট ক্রাইম থানায় এসে হাজিরা দেন প্রদীপ্ত চক্রবর্ত্তী। বালুরঘাট থানার পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেয় তাকে। কিন্তু তার পরও শান্ত হয়নি আদিবাসী বিভিন্ন সংগঠন ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি আন্দোলন।
পরবর্তীতে পঞ্চায়েত নির্বাচনে গিয়ে আসায় দণ্ডী কান্ডের ঘটনাকে অস্ত্র করে মাঠে নাম ছিল বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। দণ্ডীকাণ্ডের ঘটনার ডেমেজ কন্ট্রোল করতে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে দণ্ডী কান্ডের নির্যাতিত এক আদিবাসী মহিলাকে তৃণমূল কংগ্রেসের গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রার্থী করা হয় আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে।
বালুরঘাট আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার বিকেলে দণ্ডী কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত প্রদীপ্তা চক্রবর্তী বালুরঘাট আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। শনিবার জেলা ও দায়রা আদালতের প্রথম কোর্টের বিচারক অলি বিশ্বাস দণ্ডী কান্ডের নির্যাতিতা আদিবাসী মহিলাদের উপস্থিতিতে মূল অভিযুক্ত প্রদীপ্তা চক্রবর্তী জামিন মঞ্জুর করেন। দণ্ডী কান্ডের নির্যাতিতা আদিবাসী মহিলাদের জামিনের বিষয়ে আপত্তি না থাকায় জামিন মঞ্জুর হয় বলে খবর।
বালুরঘাট আদালতের বিশেষ সরকারি আইনজীবী উদয় ঘোষ দস্তিদার জানান, দন্ডী মামলায় বালুরঘাট আদালতের ফাস্ট কোর্টের বিচারক প্রদীপ্তা চক্রবর্তীর জামিল মঞ্জুর করেছেন।
এদিকে দন্ডী মামলায় প্রদীপ্তা চক্রবর্তীর জামিন হওয়ায় কটাক্ষ বিজেপির, বিজেপি জেলা সভাপতি স্বরূপ চৌধুরী জানান, আদিবাসী মহিলাদের যেভাবে অপমান করা হয়েছে, তাকে চরম সাজা পাওয়া উচিত। পুলিশ তার বিরুদ্ধে জোরালো মামলা না করায় তিনি জামিন পেয়েছেন।
তৃণমূলের জেলা সহ সভাপতি সুভাষ চাকী জানান, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে দল যা ব্যবস্থা নেওয়ার আগেই নিয়েছে। আদালতের বিষয়টি, আদালতের বিচারাধীন, সে বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করবেন না।
তবে দন্ডী কাণ্ডের ঘটনার মূল অভিযুক্ত প্রদীপ্ত চক্রবর্তীর সহ অন্যান্য অভিযুক্তদের আদালতের তরফে জামিন মঞ্জুর হলেও মামলা শুনানি এখনো পর্যন্ত হয়নি। পরবর্তী মামলা শুনানির তারিখ ১লা জুলাই বলে জেলা আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে।