গত তিন দিন আগে মৃত দিদিমার সাথে বসবাস করে চলছিল মানসিক ভারসাম্যহীন নাতনি।
1 min read
আজকেরবার্তা, কুমারগঞ্জ, ২৪জুনঃ বাবা মা হারা মানসিক ভারসাম্যহীন কিশোরীর একমাত্র আশ্রয় বৃদ্ধা দিদা। তবে তিন দিন আগে ইহজগৎ ছেড়ে চলে যান মানসিক ভারসাম্যহীন কিশোরীর একমাত্র আশ্রয়। তবে বোধ শক্তি স্বচ্ছল না থাকায় মৃত দিদিমার সাথে তিন দিন ধরে বসবাস করছিল নাতনি। তিন দিন পর বৃদ্ধার মৃত্যুর খবর জানতে পারি স্থানীয়রা। ঘটনার খবর দেওয়া হয় কুমারগঞ্জ থানায়। পুলিশ এসে মৃতদেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায়। ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা কুমারগঞ্জ ব্লকের ভোঁওড় এলাকায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে মৃত বৃদ্ধার নাম সন্ধ্যারানী ঝাঁ। দীর্ঘ সময় ধরে শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন বৃদ্ধা। বাড়িতে সংসার বৃদ্ধা ও তার মানসিক ভারসাম্যহীন নাতনির। আর্থিক সঙ্গতি না থাকায় প্রতিবেশীদের সাহায্যে দিন যাপন করত তারা। বেশ কয়েক দিন ধরে বৃদ্ধাকে বাড়ির আশেপাশে দেখতে না পেয়ে স্থানীয়রা তার বাড়িতে যায় সেখানে গিয়ে দেখে বৃদ্ধা মৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। গা থেকে বেরোতে শুরু করেছে পচা দুর্গন্ধ। আর তার পাশেই দিনযাপন করছে তার মানসিক ভারসাম্যহীন নাতনি। দুই দিন থেকে অভুক্ত সে। ঘটনায় স্থানীয়দের তৎপরতায় খবর দেওয়া হয় কুমারগঞ্জ থানায়। কুমারগঞ্জ থানার পুলিশ এসে মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে পুলিশ মর্গে পাঠায় বৃহস্পতিবার। এরপর কুমারগঞ্জ বিডিও এবং কুমারগঞ্জ থানার উদ্যোগে মানসিক ভারসাম্যহীন নাতনির খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। ভারসাম্যহীন নাবালিকাকে দেখভাল করার জন্য মোতায়েন করা হয়েছে সিভিক ভলেন্টিয়ার। ময়নাতদন্তের পর শুক্রবার কুমারগঞ্জ থানার পুলিশ এবং স্থানীয় ক্লাবের সদস্যদের তৎপরতায় বৃদ্ধার মৃতদেহ সৎকার করা হয় বালুরঘাট খিদিরপুর মহাশ্মশানে। প্রশাসনের সহযোগিতায় এরপর প্রথমে মানসিক ভারসাম্যহীন নাবালিকাকে বালুরঘাট জেলা হাসপাতালের মানসিক বিভাগে ভর্তি করা হবে এবং তারপর সেখান থেকেই তাকে হোমে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।
জানা গিয়েছে, সন্ধ্যা রানী ঝাঁর স্বামী অনেকদিন আগেই মারা গিয়েছেন। এক মেয়ে ও তার স্বামীও অনেক দিন আগে মারা গেছেন। এক ছেলে থাকলেও তার কোন খোঁজ নেই। এদিকে সন্ধ্যা রানী দেবীর নাতনি রানী চৌধুরী মানসিক ভাবে অসুস্থ। তাকে নিয়েই কোন রকমে বাস করতেন তিনি। বয়সের কারণে বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন তিনি। নাতনি রানীকে নিয়েই সংসার ছিল তাঁর। ছোট থেকেই সুস্থ ও স্বাভাবিক ছিল না রানী। অভাব-অনটন থাকায় নাতনির চিকিৎসা করাতে পারেননি।
মহিলা কে দেখতে না পাওয়ায়, স্থানীয়রা গতকাল বৃদ্ধার বাড়ি যান। তখনই নজরে আসে বৃদ্ধার দেহ ঘরে পড়ে রয়েছে।দেহ থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। আর তার পাশেই বসে আছে তাঁর নাতনি রানী। সন্ধ্যা দেবীর মৃত্যুর খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে কুমারগঞ্জ থানার পুলিশ। সবকিছু খতিয়ে দেখার পর পুলিশের প্রাথমিক অনুমান গত মঙ্গলবারই মারা যান তিনি। মারা যাওয়ায় তিন দিনে শরীরে পচন ধরেছিল। যার ফলে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল। এদিকে ওই বৃদ্ধার নাতনী মৃতদেহের সঙ্গেই দিন কাটায়। এমনকি দু’দিন ধরেই অভুক্ত অবস্থায় ছিল সে। বিষয়টি নজরে আসার পরে ওই মানসিকভাবে অসুস্থ নাবালিকাকে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেন প্রতিবেশীরা। যদিও বর্তমানে পুলিশ তার দেখভাল করছে।
এদিকে প্রতিবেশীদের এখন চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ওই মানসিক ভাবে অসুস্থ নাবালিকাকে নিয়ে। কারণ এতদিন পর্যন্ত সে তার দিদার সঙ্গে থাকত। বর্তমানে তার আর কেউ নেই। সে কি ভাবে থাকবে? কোথায় থাকবে? আপাতত ওই নাবালিকাকে প্রতিবেশী একজনের বাড়িতে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রতিবেশীরা পুরো বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আনার চেষ্টা করছেন। প্রশাসনের তরফে ওই নাবালিকাকে কোন হোমে থাকার ব্যবস্থার পাশাপাশি চিকিৎসার ব্যবস্থা করলে হয়ত সে সুস্থ হয়ে উঠতে পারে।
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পুলিশ সুপার রাহুল দে জানান, খবর পেয়ে পুলিশ দেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায়। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর কারণ ও কতদিন আগে মারা গেছেন তা জানা যাবে। মৃতার নাতনি কে হোমে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
কুমারগঞ্জের ভিডিও মৃতের বাড়িতে গিয়ে নাতনির সাথে দেখা করেন। তিনি জানান, ঐ নাবালিকা মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায়, হোমে নয়, আপাতত বালুরঘাট হাসপাতালের মানসিক বিভাগে ভর্তি করা হবে।