কাশ্মীরে নৃশংস শ্রমিক হত্যালীলার ঘটনায় আতঙ্কিত কালিয়াচকের বাসিন্দা।
1 min read
আজকের বার্তা, মালদা, ১নভেম্বর ঃ- কাশ্মীরে নৃশংস শ্রমিক হত্যালীলার ঘটনায় আতঙ্কিত কালিয়াচক ১ নং ব্লক সহ আশেপাশের গ্রামের বাসিন্দা। দিন কয়েক আগে কাশ্মীরে কর্মসূত্রে যাওয়া মুর্শিদাবাদের পাঁচ জন শ্রমিককে গুলি করে হত্যা করে জঙ্গিরা। এরপর কাশ্মীরে কর্মরত পাঁচ যুবকের মৃত দেহ আসে পশ্চিম বঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায়। তার জেরেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে মালদা জেলার চাঁচল এলাকার তিনশতাধিক পরিবার। বিভিন্ন কাজের সূত্রে মালদা জেলার প্রায় ৩৫০ শ্রমিক রয়েছে কাশ্মীরের বিভিন্ন প্রান্তে। পরিবারের উপার্জনকারী ব্যাক্তির নিরাপত্তার কামনা করে চলেছে মালদা জেলার একাধিক এলাকার বাসিন্দারা।
প্রসঙ্গত, মালদা জেলার ছেলেরা কেউ রেশম তো আবার কেউ আখরোট, আবার কেউ আপেল সহ বিভিন্ন কাজে রয়েছে কাশ্মীরে। শ্রমিকের কাজে করে পরিবারের মুখে অন্ন জোটাতে ভিন রাজ্য কাশ্মীরে রয়েছেন তারা। কালিয়াচক ১ ব্লকের নৌদা যদুপুর অঞ্চলের সালেরপুর, উত্তর দারিয়াপুর, নোয়াবস্তি গ্রামের প্রায় ১৫০ যুবক শ্রমিকের বিভিন্ন কাজে রয়েছে ভূসর্গ কাশ্মীরে। পাশাপাশি মজমপুর, আলিপুর ১ ও ২ অঞ্চলের প্রায় দুই শতাধিক মানুষ শ্রমিকের কাজে এখনো কাশ্মীরে রয়েছেন। এমত অবস্থায় কাশ্মীরে শ্রমিক খুনের ঘটনা জানা জানি হতেই পরিবারের সদস্যরা আতঙ্কে ভুগছেন। এখন তাদের একটাই কামনা সুস্থ ভাবে পরিবারের অর্থ উপার্জনকারী মানুষটি বাড়ি ফিরে আসলে আর কাশ্মীরে যেতে দেবেন না তারা।
উল্লেখ্য, গত দুই দিন আগে ভূসর্গ কাশ্মীরের কুলগ্রামে জঙ্গিদের গুলিতে মৃত্যু হয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলার পাঁচ জন শ্রমিকের। ঘটনার পর কফিনবন্দি শ্রমিকদের দেহ ফিরেছে তাদের পরিবারের কাছে। আর এই ঘটনা টিভির পর্দায় দেখার পর রীতিমতো আতঙ্কিত হয়ে পরেছে মালদার কালিয়াচক ১ ব্লকের প্রায় ৩৫০ জন শ্রমিকের পরিবারের সদস্যরা। কাশ্মীরের বিভিন্ন জায়গায় এখন তাদের পরিবারের সদস্যরা রয়েছে নানান কর্মসূত্রে। মূলত বিভিন্ন ক্ষেত্রে শ্রমিকের কাজে মালদা জেলার পুরুষেরা গিয়েছে কাশ্মীরে। প্রতিনিয়ত যোগাযোগ করছেন পরিবারের সদস্যরা কাশ্মীরে কর্মরত পরিজনদের সাথে। এখন শুধু মাত্র তাদের একটাই কাম্য ফিরে আসুক তাদের ঘরের সন্তান-স্বামী-বাবা।
এপ্রসঙ্গে কাশ্মীর থেকে সদ্য পালিয়ে আসা শ্রমিক রাকিবুল ইসলাম জানান, কাশ্মীরের বারেমুল্লা এলাকায় তিনি শ্রমিকের কাজ করতেন। কিন্তু দিন দশেক আগেই তিনি সেখান থেকে পালিয়ে বাড়ি ফিরে এসেছেন। পরিস্থিতি বেগতিক, যেকোনো মুহূর্তে প্রাণ নাশ হতে পারে। তাই প্রাণনাশের ভয়ে আগেই পালিয়ে বাড়ি ফিরে এসেছেন তিনি। আত্মীয় সহ গ্রামের অনেকেই এখনো রয়েছে কাশ্মীরের বিভিন্ন এলাকায়। কাশ্মীরে শ্রমিকের কাজের ওপরই তাদের পরিবারের জীবিকা নির্বাহন হয়। কিন্তু প্রাণহানির ভয়ে এবার থেকে কাশ্মীরে যেতে চাইছেন না আর কেউ।
অন্যদিকে দারিয়াপুর নোয়াবস্তি গ্রামের বাসিন্দা হেনা বিবি বলেন, তার দুই ছেলে ও এক জামাই এখনো কাশ্মীরে শ্রমিকের কাজে রয়েছে। এই ভিন্য রাজ্যে শ্রমিকের কাজের ওপরই নির্ভর তাদের গোটা পরিবার। শ্রমিক খুনের ঘটনার খবর পাওয়ার পর এখন চাইছি ছেলেরা সুস্থ অবস্থায় বাড়ি ফিরে আসুক। ফোনে যোগাযোগ করে বাড়ি ফেরার কথা বলেছেন পরিবারের সকলে। শ্রমিকের কফনবন্দি মৃতদেহ মুর্শিদাবাদে আসায় ভয়াবহ আতঙ্ক ছড়িয়ে রয়েছে মালদা জেলার বিভিন্ন গ্রাম জুড়ে।
অপরদিকে এপ্রসঙ্গে কালিয়াচক ১নং পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য হাসেন আলী জানান, এলাকার প্রায় ৩৫০ মানুষ বিভিন্ন শ্রমিকের কাজে এখনো কাশ্মীরে রয়েছে। জঙ্গিদের গুলিতে শ্রমিক খুনের ঘটনার খবর চাউর হতেই আপন জন কে হারানোর আতঙ্ক রয়েছে মালদা জেলার বিভিন্ন গ্রামে কাশ্মীরে কর্মরত শ্রমিক পরিবারের পরিজনেরা।